যে আমলে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হয়

যে আমলে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হয়

যে আমলে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হয়
যে আমলে পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হয়

ধর্ম ডেস্ক: দোয়া ও নিরাপত্তামূলক একটি বাণী হলো সালাম। এ সালাম শান্তি ও কল্যাণময় জীবনের হাতছানি দেয় এবং মানবের ইহজীবন-পরজীবন শান্তি ও কল্যাণময় করে তোলে। মানবজাতির পিতা, প্রথম মানব, প্রথম নবী আদম (আ.) ও ফেরেশতাদের মাধ্যমে জান্নাতে সূচনা সালামের। এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে তাঁর যথাযোগ্য গঠনে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর উচ্চতা বা দৈর্ঘ্য ছিল ৬০ হাত।

তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেন, ‘তুমি যাও। উপবিষ্ট ফেরেশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগ সহকারে শুনবে তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়। কারণ এটাই হবে তোমার ও তোমার বংশধরের সম্ভাষণ বা অভিবাদন।’ তাই তিনি গিয়ে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’, তাঁরা জবাবে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’।
তাঁরা ওয়া রহমাতুল্লাহ বাক্যটি বৃদ্ধি করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২২৭)
ইসলামে সালামের প্রচলন

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন বিখ্যাত সাহাবির নাম আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদিনায় আগমনের আগে তিনি ছিলেন ইহুদি। থাকতেন মদিনায়।

ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতের গভীর জ্ঞান রাখতেন তিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর তিনি ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। এক হাদিসে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদিনায় আগমনের পরের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবে :
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন বাঁধভাঙা স্রোতের মতোই মানুষ তাঁর দিকে ছুটতে শুরু করল। তারা বলাবলি করতে লাগল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে এসেছেন; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে এসেছেন। তাঁকে দেখার জন্য মানুষের ভিড়ের মধ্যে আমিও গেলাম।

আমি তাঁর চেহারা দেখেই তাঁকে চিনতে পারলাম আর তখনই বুঝতে পারলাম, এ চেহারা কোনো মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়। সেদিন আমি তাঁকে প্রথম যে কথাটি বলতে শুনেছি তা হলো, হে মানুষেরা! তোমরা সালামের বিস্তার ঘটাও, মানুষকে খাবার খাওয়াও এবং যখন অন্য মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ পড়ো (তাহাজ্জুদ পড়ো), তাহলে তোমরা শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে যেতে পারবে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৮৫)
হাদিসটির প্রেক্ষাপট ও উপস্থাপন আমাদের সামনে সালামের গুরুত্ব দিবালোকের মতো স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করে এসে মানুষকে প্রথম উপদেশ দিচ্ছেন, তোমরা সালামের বেশি প্রচলন ঘটাও!

সালাম গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া

ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, দুই মুসলমান যখন মিলিত হয়, তখন যেন একে অন্যকে সালাম দেয় অর্থাৎ একজন বলবে, আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ওয়াবারাকাতুহু–তোমার ওপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক; অন্যজন জবাবে বলবে, ওয়া আলাইকুমুস সালামু ওয়ারাহমাতুল্লাহ ওয়াবারাকাতুহু।

অর্থাৎ তোমার ওপরও শান্তি ও আল্লাহর রহমত, বরকত বর্ষিত হোক। এভাবে স্থান-কালের বন্ধন থেকে মুক্ত করে একে অন্যের জন্য আল্লাহর রহমত, শান্তি, বরকত কামনার চেয়ে উত্তম দোয়া আর কী হতে পারে! আর সালামের মোড়কে মোড়ানো এই দোয়া যদি কারো জন্য কবুল হয়, তাহলে তার চেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি আর কে হবে।

ইসলামের শ্রেষ্ঠ আমল

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর বর্ণনা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক সাহাবি প্রশ্ন করলেন- ইসলামের শ্রেষ্ঠ আমল কোনটি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি মানুষকে খাবার খাওয়াবে আর তোমার পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে। (বুখারি, হাদিস : ১২)

বেহেশত লাভের আমল সালাম

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর তোমাদের ঈমান ততক্ষণ পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না তোমরা একে অন্যকে ভালোবাস। আমি কি তোমাদের এমন একটি আমলের কথা বলব, যখন তোমরা তা করবে, তখন একে অন্যকে ভালোবাসবে। তোমরা তোমাদের মধ্যে সালামের প্রচলন ঘটাও। (মুসলিম, হাদিস : ৫৪)

সালামের মাধ্যমে ভারী হয় আমলনামা

ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.)-এর বর্ণনা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে এসে এক ব্যক্তি ‘আসসালাম আলাইকুম’ বলে সালাম দিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিলেন। লোকটি তখন মজলিসে বসে পড়ল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ১০ (অর্থাৎ তুমি ১০ নেকি পেলে)। এরপর আরেকজন এসে ‘আসসালাম আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম দিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিলেন। লোকটি তখন মজলিসে বসে পড়ল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ২০ (অর্থাৎ তুমি ২০ নেকি পেলে)। এরপর তৃতীয় আরেকজন এসে ‘আসসালাম আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’ বলে সালাম দিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিলেন। লোকটি তখন মজলিসে বসে পড়ল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ৩০ (অর্থাৎ তুমি ৩০ নেকি পেলে)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৫)

সালামকে যদি আমরা আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারি এবং সালামের মর্ম আমরা আমাদের জীবনে ধারণ করতে পারি, তাহলে একদিকে যেমন আমাদের পরকালীন পুঁজি বৃদ্ধি পাবে, তেমনি সমাজে বয়ে যাবে আন্তরিকতা আর সম্প্রীতির স্নিগ্ধ হাওয়া। আমাদের পার্থিব জীবনও হয়ে উঠবে শান্তি ও কল্যাণময়।

লেখক : ইমাম ও খতিব, মসজিদুল আমান, গাঙ্গিনারপাড়, মোমেনশাহী

ও সিনিয়র মুহাদ্দিস জামিয়া আরাবিয়া মাখযানুল উলুম তালতলা মোমেনশাহী।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply